ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৬ বার পড়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউজ ফর জাস্টিস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনি আইনের বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না।

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো, এ স্লোগান দিয়ে মানুষকে আমরা ভোট নিয়ে সচেতন করি। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করি। যে ক্ষমতা সেনানিবাসে বন্দি ছিল, সেটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতিবামপন্থি ও অতিডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো সেটাই প্রশ্ন। অতিবামদের আদর্শ নেই, তারা বলে, সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? আর বলে, নির্বাচন বানচাল করতে হবে। তার মানে হলো, যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তারপর নিজেদের রাজনৈতিক নেতা বানানো, নির্বাচন নামে প্রহসন, এইসব। তবে ভোট চুরি করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছি।

জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। তাদের হাতে গড়া দলের কাছ থেকে শুনতে হয় নির্বাচনের কথা! বিএনপির আমলে যত নির্বাচন হয়েছে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি, ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।

বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির পরে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলছে। বিএনপি ও তাদের জোটকে বলবো, আগুন নিয়ে খেলা বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, এটা তারা বানচাল করতে পারবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণ তার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, যাকে দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। মানুষকে গণতান্ত্রিক ধারা সম্পর্কে সচেতন আমরা করেছি।

টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূলের মানুষকে লক্ষ্য রেখেই করা। শুধু মুষ্টিমেয় লোক লাভবান হবে, ক্ষমতায় এলে যা স্বৈরশাসকরা করতো, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তারা কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করতো, হাতে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ তুলে দিয়ে, তাদেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতো। আমাদের সেটা ছিল না, আমাদের ছিল জনগণের ক্ষমতার ক্ষমতায়ন। তৃণমূলের মানুষ যাতে ক্ষমতা পায় তা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা অর্জন করা কঠিন। আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করেছি।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আজকে মানুষকে বিদেশি পুরনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয় না।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেসব দলের কাছে কোনও আওয়াজই পাচ্ছি না, কিছুই বলছে না।

টানা তিন মেয়াদে সরকারের সুফল জনগণ ভোগ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে সরকারে উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও দেখলাম ১৮-১৯টা কারখানা ভাঙচুর, আন্দোলন। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কত শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে শ্রমিকদের? বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে কিছুই বাড়ায়নি। যেটুকু করার আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে।

দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে সেবা করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা মানুষের সেবা-অধিকার সুনিশ্চিত করেছি বলেই তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। আজকে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে কোন দলের উপর তাদের আস্থা আছে? সেটা আওয়ামী লীগের উপরই আছে। এ আস্থা-বিশ্বাসটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। আজকে যারা নির্বাচন বানচালের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই।

বাস, ট্রেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরঞ্জামবহনকারী গাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এগুলো আমরা বরদাশত করবো না। যেটা জনগণকে সহযোগিতা দিচ্ছে, জনগণ সুফল পাচ্ছে।

নির্বাচন বানচালের নামে ২০১৪ সালে প্রায় ৫০০টা স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তা, বিচারক, আইনজীবীদের উপর হামলা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে, আমার কথা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বয়স হয়ে গেছে, অসুস্থ। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি। সে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হয় তাহলে তাকে কোর্টে যেতে হবে। আমরা বলেছি কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে অনুমতি নিক। সেটা না করে ওইটা নিয়ে আবার আন্দোলনের চেষ্টা করে। আসলে এরা ইস্যু হিসাবে দেখে। আদৌ যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতো তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হতো।

ছেলে তো মাকে দেখতে এলো না কোনদিন এত যায় যায়, মরে মরে এত কথা শুনেও ছেলে আর আসে না। ছেলে আসবে কি? সে তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলায় আমাদের নেতা আইভী রহমানসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। অর্থ দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মামলা আমাদের করা না, আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডা থেকে এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। এদের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য এসেছে।

তিনি বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর এখানে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যে দলের নেতাই নেই, মুণ্ডুহীন দল, মাথাই নাই। সে নেতা কখনোই আসবে না। আসার ইচ্ছা থাকলে চলে আসতে পারতো। তার হুকুমে বাংলাদেশে যারা মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে তাদের ক্ষতি করছে। এরকম একটা দায়িত্ব তারা নিচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন করতে চায় না, কারণ এটা মুণ্ডুহীন একটা দল হয়ে গেছে। কারণ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবে না। এ জন্য তারা নির্বাচন চায় না। চায় না বলেই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। বানচাল করে তাদের লাভটা কি হবে? বাংলাদেশের মানুষের লাভটা কি হবে?

শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরণের নেতৃত্বের হুকুমে মানুষের ক্ষতি করে তারা তো অভিশাপ পাবে, মানুষের অভিশাপে পড়বে। যে কয়টা মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার, তারা তো অভিশাপ দিচ্ছে, তাদের পরিবার দিচ্ছে। কারণ তাদের জীবন-জীবিকা, পোড়া ঘা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

 

আরকে/১৭

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৬:৫৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনি আইনের বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না।

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো, এ স্লোগান দিয়ে মানুষকে আমরা ভোট নিয়ে সচেতন করি। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করি। যে ক্ষমতা সেনানিবাসে বন্দি ছিল, সেটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতিবামপন্থি ও অতিডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো সেটাই প্রশ্ন। অতিবামদের আদর্শ নেই, তারা বলে, সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? আর বলে, নির্বাচন বানচাল করতে হবে। তার মানে হলো, যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তারপর নিজেদের রাজনৈতিক নেতা বানানো, নির্বাচন নামে প্রহসন, এইসব। তবে ভোট চুরি করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছি।

জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। তাদের হাতে গড়া দলের কাছ থেকে শুনতে হয় নির্বাচনের কথা! বিএনপির আমলে যত নির্বাচন হয়েছে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি, ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।

বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির পরে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলছে। বিএনপি ও তাদের জোটকে বলবো, আগুন নিয়ে খেলা বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, এটা তারা বানচাল করতে পারবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণ তার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, যাকে দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। মানুষকে গণতান্ত্রিক ধারা সম্পর্কে সচেতন আমরা করেছি।

টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূলের মানুষকে লক্ষ্য রেখেই করা। শুধু মুষ্টিমেয় লোক লাভবান হবে, ক্ষমতায় এলে যা স্বৈরশাসকরা করতো, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তারা কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করতো, হাতে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ তুলে দিয়ে, তাদেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতো। আমাদের সেটা ছিল না, আমাদের ছিল জনগণের ক্ষমতার ক্ষমতায়ন। তৃণমূলের মানুষ যাতে ক্ষমতা পায় তা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা অর্জন করা কঠিন। আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করেছি।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আজকে মানুষকে বিদেশি পুরনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয় না।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেসব দলের কাছে কোনও আওয়াজই পাচ্ছি না, কিছুই বলছে না।

টানা তিন মেয়াদে সরকারের সুফল জনগণ ভোগ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে সরকারে উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও দেখলাম ১৮-১৯টা কারখানা ভাঙচুর, আন্দোলন। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কত শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে শ্রমিকদের? বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে কিছুই বাড়ায়নি। যেটুকু করার আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে।

দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে সেবা করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা মানুষের সেবা-অধিকার সুনিশ্চিত করেছি বলেই তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। আজকে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে কোন দলের উপর তাদের আস্থা আছে? সেটা আওয়ামী লীগের উপরই আছে। এ আস্থা-বিশ্বাসটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। আজকে যারা নির্বাচন বানচালের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই।

বাস, ট্রেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরঞ্জামবহনকারী গাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এগুলো আমরা বরদাশত করবো না। যেটা জনগণকে সহযোগিতা দিচ্ছে, জনগণ সুফল পাচ্ছে।

নির্বাচন বানচালের নামে ২০১৪ সালে প্রায় ৫০০টা স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তা, বিচারক, আইনজীবীদের উপর হামলা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে, আমার কথা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বয়স হয়ে গেছে, অসুস্থ। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি। সে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হয় তাহলে তাকে কোর্টে যেতে হবে। আমরা বলেছি কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে অনুমতি নিক। সেটা না করে ওইটা নিয়ে আবার আন্দোলনের চেষ্টা করে। আসলে এরা ইস্যু হিসাবে দেখে। আদৌ যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতো তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হতো।

ছেলে তো মাকে দেখতে এলো না কোনদিন এত যায় যায়, মরে মরে এত কথা শুনেও ছেলে আর আসে না। ছেলে আসবে কি? সে তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলায় আমাদের নেতা আইভী রহমানসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। অর্থ দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মামলা আমাদের করা না, আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডা থেকে এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। এদের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য এসেছে।

তিনি বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর এখানে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যে দলের নেতাই নেই, মুণ্ডুহীন দল, মাথাই নাই। সে নেতা কখনোই আসবে না। আসার ইচ্ছা থাকলে চলে আসতে পারতো। তার হুকুমে বাংলাদেশে যারা মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে তাদের ক্ষতি করছে। এরকম একটা দায়িত্ব তারা নিচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন করতে চায় না, কারণ এটা মুণ্ডুহীন একটা দল হয়ে গেছে। কারণ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবে না। এ জন্য তারা নির্বাচন চায় না। চায় না বলেই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। বানচাল করে তাদের লাভটা কি হবে? বাংলাদেশের মানুষের লাভটা কি হবে?

শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরণের নেতৃত্বের হুকুমে মানুষের ক্ষতি করে তারা তো অভিশাপ পাবে, মানুষের অভিশাপে পড়বে। যে কয়টা মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার, তারা তো অভিশাপ দিচ্ছে, তাদের পরিবার দিচ্ছে। কারণ তাদের জীবন-জীবিকা, পোড়া ঘা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

 

আরকে/১৭