ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় খাবার, পানি ও ওষুধ সঙ্কট চরমে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:১৪:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৬ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ফর জাস্টিস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত সপ্তাহ অতিক্রম করে দশম দিনে পৌঁছেছে।

ইসরাইলের উপর গত ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

এর পর থেকেই গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গত বৃহস্পতিবার দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী কাৎজ এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় বলেন,

ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস সদস্যরা যেসব ব্যক্তিকে ধরে এনে বন্দী করেছেন,

তাঁদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ করা হবে না।

তার এই ঘোষণার পর থেকেই গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে জল, স্থল ও আকাশপথে গাজায় হামলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছেন ইসরাইলি সেনারা।

তারা সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এরই মধ্যে গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ওই হামলায় ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৪০০ ফিলিস্থিনি নিহত হয়েছে বলে বিশ্ব গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় এখনও দিনরাত বোমাবর্ষণ চলছে। ঘর থেকে বের হলেই মৃত্যুর শঙ্কা।

এর মধ্যে নির্দেশ এসেছে- বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছুটছেন লাখ লাখ মানুষ।

খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। রোববার পর্যন্ত এটাই ছিল গাজার পরিস্থিতি।

ইসরাইল পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর গাজায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার বাসিন্দাদের জন্য সুপেয় পানি এখন জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজার ২০ লাখ মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হলে গাজায় জ্বালানি প্রয়োজন। এক সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো ত্রাণসহায়তা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গাজার বাসিন্দাদের কাছে খাবার, পানি ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা বলছে, এ মুহূর্তে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে না পারলে খাবার,

পানি ও চিকিৎসার অভাবে শত শত মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব নয়।

গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা চালানোর জন্য এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণ অংশে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল।

এর পর থেকে উত্তর গাজার ১১ লাখের বেশি বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে।

তবে অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে থাকায় সেখানেই থাকতে হচ্ছে।

গাজার বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে খাবার। মুদিদোকানগুলো বেশিরভাগ বন্ধ।

যে দুই-একটি দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেও মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে খাবার না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

এসব মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, পানি শোধনাগার ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হওয়ার পর থেকে

গাজার বাসিন্দারা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। কুয়া থেকে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

এতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় নিহত এবং গুরুতর জখম ও আহত ব্যক্তিদের চাপে গাজার হাসপাতালগুলোয়

তিল ধারণের জায়গা নেই। তবে বেশিরভাগ রোগীকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী না আসায় হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে

গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক

রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া

বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।

অন্যদিকে হামাস বাহিনীর প্রতিরোধে শনিবার (৭ অক্টোবর) বিপুল সংখ্যক সৈন্য জড়ো করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।

বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয় তারা।

এর পর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েলের সেনা বাহিনী।

সূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স

এএমএন/১৬

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় খাবার, পানি ও ওষুধ সঙ্কট চরমে

আপডেট সময় : ০৩:১৪:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত সপ্তাহ অতিক্রম করে দশম দিনে পৌঁছেছে।

ইসরাইলের উপর গত ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

এর পর থেকেই গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গত বৃহস্পতিবার দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী কাৎজ এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় বলেন,

ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস সদস্যরা যেসব ব্যক্তিকে ধরে এনে বন্দী করেছেন,

তাঁদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ করা হবে না।

তার এই ঘোষণার পর থেকেই গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে জল, স্থল ও আকাশপথে গাজায় হামলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছেন ইসরাইলি সেনারা।

তারা সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এরই মধ্যে গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ওই হামলায় ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৪০০ ফিলিস্থিনি নিহত হয়েছে বলে বিশ্ব গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় এখনও দিনরাত বোমাবর্ষণ চলছে। ঘর থেকে বের হলেই মৃত্যুর শঙ্কা।

এর মধ্যে নির্দেশ এসেছে- বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছুটছেন লাখ লাখ মানুষ।

খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। রোববার পর্যন্ত এটাই ছিল গাজার পরিস্থিতি।

ইসরাইল পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর গাজায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার বাসিন্দাদের জন্য সুপেয় পানি এখন জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজার ২০ লাখ মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হলে গাজায় জ্বালানি প্রয়োজন। এক সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো ত্রাণসহায়তা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গাজার বাসিন্দাদের কাছে খাবার, পানি ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা বলছে, এ মুহূর্তে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে না পারলে খাবার,

পানি ও চিকিৎসার অভাবে শত শত মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব নয়।

গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা চালানোর জন্য এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণ অংশে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল।

এর পর থেকে উত্তর গাজার ১১ লাখের বেশি বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে।

তবে অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে থাকায় সেখানেই থাকতে হচ্ছে।

গাজার বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে খাবার। মুদিদোকানগুলো বেশিরভাগ বন্ধ।

যে দুই-একটি দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেও মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে খাবার না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

এসব মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, পানি শোধনাগার ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হওয়ার পর থেকে

গাজার বাসিন্দারা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। কুয়া থেকে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

এতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় নিহত এবং গুরুতর জখম ও আহত ব্যক্তিদের চাপে গাজার হাসপাতালগুলোয়

তিল ধারণের জায়গা নেই। তবে বেশিরভাগ রোগীকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী না আসায় হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে

গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক

রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া

বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।

অন্যদিকে হামাস বাহিনীর প্রতিরোধে শনিবার (৭ অক্টোবর) বিপুল সংখ্যক সৈন্য জড়ো করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।

বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয় তারা।

এর পর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েলের সেনা বাহিনী।

সূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স

এএমএন/১৬